মুহাররম ও আশুরায় মুহাম্মাদ (সাঃ) কয়েকটি আমল

মুহাররম ও আশুরার যে গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো নবিজী (সা.) আমাদের করতে বলেছেন

মুহাররম মাস, যা ইসলামী ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস, অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত মাস। এ মাসের বিশেষ মর্যাদার কারণে আমরা এতে বিভিন্ন নফল ইবাদত ও সাওম পালন করে থাকি। আশুরার দিন (মুহাররমের দশম দিন) বিশেষত উল্লেখযোগ্য, কারণ এটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। এখানে আমরা মুহাররম মাস এবং আশুরার দিনের বিশেষ আমল, কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে বিশদভাবে আলোচনা করব, ইনশা-আল্লাহ।   মুহাররম মাসের ফজিলত মুহাররম মাসের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে বেশ কিছু ইঙ্গিত ও নির্দেশনা রয়েছে। এটি হারাম (সম্মানিত) মাসগুলির (মহররম, রজব, জিলক্বদ, এবং জিলহজ্জ) একটি, যা আল্লাহ তায়ালা সম্মানিত করেছেন। মহান আল্লাহ্‌ বলেন, اِنَّ عِدَّۃَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِیۡ كِتٰبِ اللّٰهِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِكَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ “নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন।” — (সূরা আত-তওবাহ: ৩৬)   আশুরার সাওম আশুরার দিন সাওম পালন অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দিনে সাওম পালনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন এবং এর ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ করেছেন। ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আসেন, তিনি দেখেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে সাওম পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘এই সাওমের কারণ কী?’ তারা বলেন, ‘এটি একটি পবিত্র দিন; এদিনে আল্লাহ মূসা (আ.) এবং তাঁর সম্প্রদায়কে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তাই আমরা এই দিনে সাওম পালন করি।’ তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমরা মূসার (আ.) সাথে তোমাদের চেয়ে বেশি সম্পর্কিত।’ তারপর তিনি নিজে সাওম পালন করলেন এবং সাহাবাদেরও সাওম পালন করতে বললেন।”  (সহিহ বুখারি: ২০০৪) আরো একটি হাদিসে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে, এটি (আশুরার সাওম) বিগত বছরের পাপসমূহের জন্য কাফফারা হবে।” (সহিহ মুসলিম: ১১৬২) আশুরার সাওমের সাথে আরেকটি দিন যুক্ত করা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিনের সাওমের সাথে আরো একটি দিন (নয় বা এগারো তারিখে) সাওম পালন করতে উৎসাহ দিয়েছেন, যাতে ইহুদীদের সাথে একান্ত মিল না হয়। ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আগামী বছর, ইনশাআল্লাহ, আমরা নবম দিনেও সাওম পালন করবো।'” (সহিহ মুসলিম: ১১৩৪ (১১৬২)) এটি একটি স্মরণীয় দিন আশুরার দিনটি নবী দৌহিত্র হুসাইন (রাযি.) এর শাহাদাতের কারণে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। কারবালার প্রান্তরে হুসাইন (রাযি.) এবং তাঁর পরিবারবর্গের ত্যাগ ও বীরত্বের জন্য এ দিনটি মুসলমানদের হৃদয়ে গভীর দাগ রেখে যায়। যদিও আশুরার দিনের সাওম পালনের প্রথা ইমাম হুসাইন (রাযি.) এর শাহাদাতের অনেক আগেই প্রচলিত ছিল। এছাড়াও ইসলামি ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে এই দিনটি জড়িয়ে আছে। অন্যান্য নফল ইবাদত আশুরার দিনটি নফল ইবাদতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সাওম পালন ছাড়াও, দান-সদকা করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, এবং অন্যান্য নফল ইবাদত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আশুরার দিনটি যখন আসবে, আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে, তা বিগত বছরের পাপসমূহের জন্য কাফফারা হবে।” (সহিহ মুসলিম: ১১৬২) শেষ কথা মুহাররম মাস এবং বিশেষত আশুরার দিনটি ইসলামী ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দিনগুলোতে মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমলগুলো অনুসরণ করে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। সাওম পালন, দান-সদকা করা, এবং অন্যান্য নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মুহাররম মাস এবং আশুরার দিনটি যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন। তথ্যসুত্রঃ ১. [সহিহ মুসলিম: ১১৬২] ২. [সূরা আত-তওবাহ: ৩৬] ৩. [সহিহ বুখারি: ২০০৪] ৪. [সহিহ মুসলিম: ১১৩৪ (১১৬২)]

[]