শিশুর বিকাশে পরিবেশ কতটা গুরুত্ত্বপূর্ণ

শিশুর বিকাশে পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশে পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।

 

১. পরিবেশ এবং শিশুর শারীরিক বিকাশ
শিশুর স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠা তার শারীরিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে পারে। যেমন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পুষ্টিকর খাদ্য, এবং পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে যে শিশুর পরিবেশ যদি দূষিত বা ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তবে তার শারীরিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। পরিবেশের অস্বাস্থ্যকর অবস্থার কারণে শিশুর রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, যা তার শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।

 

২. মানসিক বিকাশে পরিবেশের ভূমিকা
শিশুর মানসিক বিকাশেও পরিবেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবারিক পরিবেশ, শিশুর আত্মবিশ্বাস এবং সৃজনশীলতার বিকাশকে প্রভাবিত করে।

প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী উরি ব্রনফেনব্রেনারের “ইকোলজিকাল সিস্টেমস থিওরি” অনুসারে, শিশুর মানসিক বিকাশে মাইক্রোসিস্টেম (যেমন পরিবার), মেসোসিস্টেম (যেমন স্কুল), এবং এক্সোসিস্টেম (যেমন সমাজ) ইত্যাদি পরিবেশের বিভিন্ন স্তরগুলো প্রভাব ফেলে। এই তত্ত্বে বলা হয়েছে যে শিশু একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার চারপাশের বিভিন্ন স্তরের পরিবেশ থেকে প্রভাবিত হয়।

 

৩. সামাজিক বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
শিশুর চারপাশের সমাজ, বন্ধু-বান্ধব, এবং পরিবারের সদস্যরা শিশুর সামাজিক দক্ষতা এবং সামাজিক মূল্যবোধ গঠনে সহায়ক হয়।

আলবার্ট বান্দুরা-র একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব “সোশ্যাল লার্নিং থিওরি” অনুযায়ী, শিশুরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের পরিবেশ থেকে শিখে। শিশু তার আশেপাশের মানুষদের আচার-আচরণ এবং সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমে সামাজিক নীতিমালা এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।

৪. প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং শিশুর বিকাশ
শিশুর বিকাশে প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বও অস্বীকার করা যায় না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে শিশুদের প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো তাদের সৃজনশীলতা, মনোযোগ ক্ষমতা, এবং মানসিক সুস্থতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় বলা হয়েছে যে, প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠা শিশুদের মধ্যে চাপ এবং উদ্বেগ কম থাকে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে সহায়ক হয়।

বিভিন্ন সাইকোলজিকাল তত্ত্ব এবং গবেষণা অনুযায়ী শিশুর বিকাশে পরিবেশের ভূমিকা অপরিসীম। শিশুর শারীরিক, মানসিক, এবং সামাজিক বিকাশে একটি স্বাস্থ্যকর, সুরক্ষিত, এবং সমর্থনমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

রেফারেন্স:
1. Bronfenbrenner, U. (1979). The Ecology of Human Development: Experiments by Nature and Design. Harvard University Press.
2. Bandura, A. (1977). Social Learning Theory. Prentice-Hall.
3. Wells, N. M. (2000). At Home with Nature: Effects of “Greenness” on Children’s Cognitive Functioning. Environment and Behavior, 32(6), 775-795.

[]