ভূমিকা
মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, কল্যাণ-অকল্যাণ, উত্থান-পতন সবকিছুই নির্ভর করে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার উপর। তিনি যাকে চান সম্মান দেন, যাকে চান ধৈর্যে পরীক্ষা নেন, যাকে চান তাঁর অশেষ অনুগ্রহে ছেয়ে দেন। এই বিষয়ে কুরআনের একটি আয়াত আমাদের অন্তরজগতকে গভীরভাবে স্পর্শ করে:
“আল্লাহ যদি মানুষের জন্য কোনো অনুগ্রহ দান করতে চান, তবে তা রোধ করার কেউ নেই। আর তিনি তা যার প্রতি ইচ্ছা দান করেন। তিনি পরাক্রমশালী, পরিপূর্ণ জ্ঞানসম্পন্ন।”
— (সূরা ফাতির, ৩৫:২)
এই আয়াতের তাৎপর্য
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এক চিরন্তন সত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন—
✅ আল্লাহর দেওয়া অনুগ্রহ কেউ আটকে রাখতে পারে না।
✅ তিনি যাকে চান, যে অবস্থায় চান, যখন চান অনুগ্রহ প্রদান করেন।
✅ তাঁর ক্ষমতার কোনো সীমা নেই, এবং তাঁর জ্ঞান সবার চেয়ে পরিপূর্ণ।
হাদীসের আলোকে আল্লাহর অনুগ্রহ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যদি তোমরা সমস্ত মানুষ একত্রিত হয়ে কিছু উপকার করতে চাও, তবে আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন, তার বাইরে তোমরা কিছুই করতে পারবে না। আর যদি তোমরা একত্রিত হয়ে ক্ষতি করতে চাও, তবুও আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন, তা ছাড়া কিছুই করতে পারবে না।”
— (তিরমিযী, হাদীস: ২৫১৬)
এই হাদীস আমাদেরকে আশ্বস্ত করে যে, মানুষের উপকার বা ক্ষতির উপর মানুষেরই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। মূল নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র আল্লাহর হাতে।
আল্লাহর অনুগ্রহ কার জন্য?
আল্লাহর অনুগ্রহ সীমাহীন হলেও, তা নির্দিষ্টভাবে কিছু মানুষকে বেশি দেওয়া হয়:
🔹 যারা তাকওয়াবান
🔹 যারা ধৈর্যশীল
🔹 যারা বেশি বেশি ইস্তিগফার করে
🔹 যারা দোয়ার মাধ্যমে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করে
আল্লাহ বলেন:
“তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি তোমাদের আরও দেব।”
— (সূরা ইবরাহীম, ১৪:৭)
আধুনিক জীবনে এই আয়াতের প্রভাব
আজকের প্রতিযোগিতামূলক ও দুশ্চিন্তায় ভরা সমাজে এই আয়াত একজন মুমিনের জন্য আশার বাতিঘর। যখন রিজিক নিয়ে ভয়, চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা, কিংবা জীবনের অন্য কোনো ক্ষেত্রে হতাশা এসে পড়ে—এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয়:
➡ যদি আল্লাহ কোনো ভালো চান, কেউ তা থামাতে পারবে না।
➡ তোমার নিয়তি লিখেছেন তিনিই, মানুষ নয়।
➡ তোমার দোয়া ও সবরই তোমাকে আল্লাহর রহমতের পথে রাখে।
উপসংহার
আল্লাহর অনুগ্রহের দরজা অবারিত। আমাদের কাজ হল তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা, তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল রাখা, ও নেক আমলে অবিচল থাকা। কারণ, তিনি যদি চায়, তোমাকে এমন জায়গায় তুলে দিতে পারেন যা তুমি কল্পনাও করোনি।
আসুন, সবসময় এই আয়াতটি হৃদয়ে ধারণ করি:
“আল্লাহ যদি মানুষের জন্য কোনো অনুগ্রহ দান করতে চান, তবে তা রোধ করার কেউ নেই।”
— (সূরা ফাতির, ৩৫:২)
পরিশেষে একটি দোয়া:
اللَّهُمَّ لا مانع لما أعطيت، ولا معطي لما منعت، ولا ينفع ذا الجدِّ منك الجدُّ
“হে আল্লাহ! আপনি যা দেন, তা কেউ ঠেকাতে পারে না; আর আপনি যা রোধ করেন, তা কেউ দিতে পারে না।”
— (সহীহ বুখারী: ৮৪৪)
আপনার করণীয়:
🔹 দুঃসময়েও আল্লাহর রহমতের আশা রাখুন
🔹 দোয়া ও ইস্তিগফারে মনোযোগ দিন
🔹 নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করুন
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর অনুগ্রহ লাভ করার তাওফিক দিন। আমিন।
